লন্ডন, বৃহস্পতিবার ২৫ মার্চ ২০২১
২৫ মার্চ ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর সংঘঠিত ইতিহাসের জঘণ্যতম গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি প্রদানের আহবান জানিয়ে বাংলাদেশ হাই কমিশন লন্ডন আজ ‘১৯৭১ সালে বাংলাদেশে গণহত্যা ও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি‘ শীর্ষক এক স্মারক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের গণহত্যার পঞ্চাশ বছরপূর্তি পালন করেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর জেনোসাইড স্টাডিজের সাথে যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত হাইকমিশনার সাইদা মুনা তাসনীম সভাপতিত্ব করেন।
কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক বিষয়ক অধ্যাপক ও সিনিয়র গবেষক ড. রওনক জাহান অনুষ্ঠানে মূল বিষয়ের ওপর প্রবন্ধ উপস্থাপন করে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় থেকে এ পর্যন্ত সংঘটিত সব গণহত্যার একটি তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরে বাংলাদেশের গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি প্রদানের আহবান জানান।
অনুষ্ঠানে আন্তর্জাতিক গণহত্যা ও যুদ্ধাপরাধ বিষয়ে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন কয়েকজন গবেষক বক্তব্য রাখেন। তাঁদের মধ্যে ছিলেন টেক্সাস এ এন্ড এম বিশ্ববিদ্যালয়ের লিবারেল স্টাডিজ বিভাগের প্রধান প্রফেসর জোয়ান ডিজেওর্জ-লুৎজ, আরিজোনা স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের প্রফেসার ইয়াসমিন সাইকিয়া এবং স্টেট ইউনিভার্সিটি অব নিউইয়র্ক কলেজের অধ্যাপক ড. সাচি দস্তগীর।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল এ্যাফেয়ার্সের গবেষণা বিষয়ক পরিচালক ও জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর জেনোসাইড স্টাডিজের পরিচালক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ, যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক সুলতান মাহমুদ শরীফ, বীর মুক্তিযোদ্ধা দেওয়ান গাউস সুলতান এবং শহীদ বুদ্ধিজীবী ড. আলীম চৌধুরীর কন্যা ডা. নুজহাত চৌধুরী অনুষ্ঠানে অন্যতম প্যানেলিস্ট হিসেবে বক্তব্য রাখেন।
হাইকমিনার সাইদা মুনা তাসনীম তাঁর স্বাগত বক্তব্যে বলেন, “বাংলাদেশের গৌরবময় স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছরপূর্তি বাংলাদেশ হাই কমিশন লন্ডন ‘চিরন্তন মুজিব‘ থীমের অনুপ্রেরণা নিয়ে উদযাপন করছে। এ উপলক্ষে আমি আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের ৩০ লাখ শহীদ এবং ২ লাখ বীরাঙ্গনার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাই।”
২৫ মার্চকে বাংলাদেশের গণহত্যা দিবস হিসেবে ঘোষণা করার জন্য মাননীয় প্রধামন্ত্রী’র প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে হাইকমিশনার বলেন, “মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার একটি স্বাধীন আন্তর্জাতিক ট্রাইবুনালের মাধ্যমে ১৯৭১ সালের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু করেছে। এখন আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে সংঘঠিত গণহত্যা এবং এ ধরনের গণহত্যা যাতে আর কোথাও না হয় সে ব্যাপারে বৈশ্বিক সচেতনতা তৈরি করা।”
তিনি আরো বলেন, “১৯৭১ সালে গণহত্যা কোনভাবেই কম্বোডিয়া, রুয়ান্ডা, বসনিয়া ও সাবেক যুগস্øাভিয়ায় সংঘঠিত গণহত্যার তুলনায় কম গরুত্বপূর্ণ নয়।” হাইকমিশনার বাংলাদেশের গণহত্যার বিষয়ে ব্রিটিশ রাজনীতিক, মানবাধিকার কর্মী ও সংগঠন এবং থিংকটাংকের মধ্যে বৃহত্তর সচেতনতা সৃষ্টির অংগীকার করে বলেন, আজকের অনুষ্ঠান তারই একটি অংশ।
ড. মিজানুর রহমান ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের গণহত্যা আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির জন্য আইনী প্রক্রিয়ার বিষয় তুলে ধরে বলেন, “ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার স্বার্থেই বাংলাদেশের গণহত্যার স্বীকৃতি অপরিহার্য।”
ড. ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, “১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ এবং পরবর্তী নয় মাসে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী বাংলাদেশে যে হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছিল তার উদ্দেশ্য ছিল বাঙ্গালি জাতিকে স্বমূলে নিশ্চিহ্ন করা। এই গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অনস্বীকার্য।”
ডা. নুজহাত চৌধুরী ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর বুদ্ধিজীবী হত্যাকান্ডের মর্মান্তিক বর্ণনা দেন এবং এ জন্য পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনার দাবী জানান।
গণহত্যা দিবস উপলক্ষ্যে হাই কমিশনে দিবসের কার্যক্রম শুরু হয় কালো ব্যাচ ধারণ করে মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নিরবতা পালনের মাধ্যমে। পরে বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের শহীদ সদস্য ও বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে জীবন উৎসর্গকারী শহীদদের আত্মার মাগফিরাত এবং দেশের শান্তি ও অব্যাহত অগ্রগতি কামনা করে দোয়া করা হয়। দিবসটির স্মরণে মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী প্রদত্ত বাণী পাঠ করে শুনানো হয়। এছাড়াও অনুষ্ঠানে ২৫ মার্চ-এর গণহত্যার প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। ১৯৭১ সালের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে শহীদদের প্রতি উৎসর্গ করে কাউন্সেলর (পলিটিক্যাল) দেওয়ান মাহমুদুল হক বিশিষ্ট কবি শামসুর রাহমানের একটি বিখ্যাত কবিতা আবৃত্তি করেন। এই ভার্চূয়াল অনুষ্ঠানে যুক্তরাজ্য ও আয়ারল্যান্ড থেকে বিপুল সংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশি যোগ দিয়ে জাতির পিতা ও মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধ নিবেদন করেন।
Leave a Reply